হাতির প্রজনন, গর্ভধারন এবং জীবনচক্রের অজানা সকল তথ্য

স্থলভাগের সবছেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রানী হচ্ছে হাতি। হাতির প্রজনন সংক্রান্ত এমন কিছু বিষয় আছে যা আপনি আগে কখনো শুনেননি। এই পোস্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি হাতির প্রজনন, গর্ভধারন এবং হাতির জীবনচক্রের অনেক মজার তথ্য জানতে পারবেন। 

হাতির প্রজননকালীন আচরন
হাতির প্রজননকালীন আচরন

পৃথিবীতে দুই ধরনের হাতি দেখা যায়। আফ্রিকান হাতি এবং এশিয়ান হাতি। এশিয়ান হাতির গড় আয়ু ৪৮ বছর এবং আফ্রিকান হাতির গড় আয়ু ৬০-৭০ বছর। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করার ক্ষমতা রাখে। তবে এই লম্বা সময় একটি হাতি মাত্র ০৪-০৬টি বাচ্চার জন্ম দিতে পারে। 

হাতির প্রজনন পরিপক্কতা অর্জন

প্রজননে অংশ নেওয়ার জন্য প্রথমে হাতিকে প্রজননের জন্য উপযুক্ত হতে হয়। হাতির প্রজনন পরিপক্কতা অর্জন করতে অনেক লম্বা সময় লাগে। এশিয়ান হাতিগুলো ১৪ বছর বয়সে প্রজননের সক্ষমতা অর্জন করে এবং আফ্রিকান হাতি ১০-১২ বছর বয়সে প্রজনন সক্ষমতা অজর্ন করে। যদিও এই সময় এরা প্রজননে সরাসরি অংশ নেয় না। সক্ষমতা অর্জন করা মানে একটি হাতি তার দলের একজন যুব সদস্যপদ অর্জন করে কিন্তু বাচ্চা ধারন কিংবা প্রজননে অংশ নেওয়ার অনুমতি তখনি এদের মিলে না। প্রজননে অংশ নেওয়ার জন্য একটি যুব হাতিকে আরো অনেক লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। 

হাতির প্রজননকালীন চিহ্ন

পুরুষ হাতির প্রজননের প্রধান চিহ্ন হচ্ছে Must. প্রজননের জন্য তৈরী হলে পুরুষ হাতিরা মুস্টে প্রবেশ করে (Musth)। মুস্ট হচ্ছে পুুরুষ হাতির একটি প্রজননকালীন বৈশিষ্ট যা তাদের বর্ধিত টেস্টোস্টেরনের একটি বিশেষ অবস্থা। মুস্টের সময় পুরুষ হাতির মাথার দুই পাশের টেম্পোরাল গ্রন্থি থেকে টেমপোরিন নামক ধরনের তরল নিঃসৃত করে। যা দেখে বোঝা যায় পুরুষ হাতিটি প্রজননের জন্য তৈরী হয়েছে। মুষ্টে প্রবেশ করার সময়ের আগে পরে পুরুষ হাতিটি তার দল ত্যাগ করে আলাদা হয়ে অন্য কোন ছোট দলের সাথে যোগ দেয় না হয় একাকী থেকে স্ত্রী সঙ্গী খুজে বের করে এবং আরেকটি দল তৈরীর চেষ্টা করে।

Elephants Musth
পুরুষ হাতির মুস্ট

স্ত্রী হাতিগুলো প্রজনন সক্ষমতা অর্জন শুরু হয় তাদের অস্ট্রাস সাইকেল শুরু হলে। সাধারনত ১৪-১৫ বছর বয়স থেকেই স্ত্রী হাতির অস্ট্রাস সাইকেল শরু হয়। অস্ট্রাস সাইকেল শুরু হলে স্ত্রী হাতিগুলো তাদের মূত্রের সাথে ফেরোমেন নিঃসরণ করে। এছাড়াও এরা মুস্টে থাকা পুরুষ হাতির ডাক অনুসরন করা শুরু করে। 

হাতির প্রজনন কালীন আচরন 

এশিয়ান হাতিগুলো ১৫ বছর বয়সে মুস্টে প্রবেশ করলেও ২৫ বছর আগ পর্যন্ত এটি বেশী তীব্র হয় না। অপরদিকে আফ্রিকান হাতিগুলোর মুস্টের তীব্রতা ৩০ বছরের আগে হয় না। মুস্টে প্রবেশ করলে পুরুষ হাতিগুলোর টেস্টোস্টেরন হরমনোর মাত্রা বেড়ে যায় যা অন্য সময়ের তুলনায় প্রায় ৬০ গুন বেশী। শরীরে যৌন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে দেহের তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। একই সাথে টেম্পোরাল গ্রন্থি হতে হরমোন নিঃসৃত হতে শুরু করে যার ফলে টেম্পোরাল গ্রন্থি ফুলে যায়। টেম্পোরাল গ্রন্থির ফুলে যাওয়াতে হাতিগুলোর চোখে ব্যাথা অনুভুত হয়। শরীরের এমন পরিবর্তনের সাথে সাথে পুরুষ হাতিগুলোর আচরনেরও পরিবর্তন হয়। পুরুষ হাতির কয়েকটি প্রজননকালীন আচরন নিম্নরূপ-

০১. মুস্টের তীব্রতায় পুরুষ হাতিগুলো স্ত্রী হাতির সাথে মিলনের চেষ্টা করে যদিও স্ত্রী হাতিটি তখন প্রজননের জন্য তৈরী কিনা তা যাচাই করে না। 

০২. এই সময় পুরুষ হাতিগুলো তাদের লিঙ্গ খাজের ভিতর রেখে প্রসাব নিঃসরন করে যার ফলে পিছনের পায়ে প্রসাব স্প্রে হয়। 

০৩. যৌন মিলনে ব্যার্থ হলে পুরুষ হাতিগুলো তাদের শুড় দিয়ে মাটিতে গর্ত করতে শুরু করে কিংবা মাথার পাশের টেম্পোরাল গ্রন্থির অংশ দিয়ে বড় বড় গাছের সাথে অনবরত ঘর্ষন করতে থাকে। এতে করে টেম্পোরাল গ্রন্থির ব্যাথা কমলেও সেই গাছটির অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। 

০৪. মাঝে মাঝে দলের অন্য পুরুষ হাতির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় , কখনো কখনো আশেপাশের গ্রামে হামলা করে।

০৫. এই সময় এরা মুখ দিয়ে একটি ভিন্ন ধরনের ডাক দেয় যাতে বোঝা যায় তারা মুস্টে আছে। একই সাথে স্ত্রী হাতিকে আকর্ষিত করতে পুরুষ হাতিটি তার একটি কান নাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দুলতে দুলতে হাঁটে। 

অল্প বয়স্ক পুরুষ হাতিগুলো শুকনো মৌসুমে মুস্টে প্রবেশ করলেও বয়স্ক এবং পূর্বে যৌন মিলন করেছে এমন পুরুষ হাতিগুলো বর্ষা মৌসুমে মুস্টে প্রবেশ করে। প্রাথমিক মুস্টের সময় কাল থাকে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ, মাধ্যমিক মুস্টের সময়কাল থাকে ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ এবং চূড়ান্ত মুস্টের সময়কাল থাকে ৪-৫ সপ্তাহ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মুস্ট অল্প বয়স্ক পুরুষ হাতিদের দেখা যায় যারা এখনো প্রজনন শুরু করে নাই কিংবা করার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।  

হাতির মিলন

হাতিরা বহুগামী। অর্থাৎ প্রজননকালে একটি স্ত্রী একাধিক পুরুষের সাথে এবং একটি পুরুষ একাধিক স্ত্রীর সাথে যৌন মিলনে মিলিত হয়। গ্রীষ্মে স্ত্রীরা যৌন মিলনে আগ্রহ কম দেখায় যেখানে বর্ষাকালে সবছেয়ে বেশী যৌন মিলন ঘটে। অস্ট্রাস চক্রে আসার পর স্ত্রী হাতি তার প্রস্রাব ও যোনি দ্বারা ফেরোমোন নিঃসরন করে। যার দ্বারা স্ত্রী হাতিটি যৌন মিলনের জন্য প্রস্তুত এই তথ্যটি দলের সকলকে জানান দেয়।

হাতির মিলন
মিলনের পূর্ব মূহর্তে

স্ত্রী হাতির ফেরোমোন অনুসরন করে পুরুষ হাতি স্ত্রী হাতির নিকট সঙ্গম করতে আসে। স্ত্রী হাতির অস্ট্রাস সাইকেল ১৪-১৬ সপ্তাহ ব্যাপী হয় যেখানে প্রথম ৪-৬ সপ্তাহের ফলিকুলার দশা এবং ৮-১০ সপ্তাহের লুটেল দশা। লুটেল দশায় ডিম্বস্ফোটন ঘটে। এই সময়ে মিলনে হাতির গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। যদিও সমগ্র অস্ট্রাস সাইকেল সময় জুড়ে এরা মিলনে লিপ্ত হয়। 

পুরুষ ও স্ত্রী হাতির মিলন
হাতির মিলন

পুরুষ হাতিগুলো অস্ট্রাসে থাকা স্ত্রী হাতিগুলোকে অনুসরন করতে থাকে এবং এই সময় এরা স্ত্রী হাতিদের পাহারাদারের মতো অবস্থান করে। একটি দলের দুর্বল ও অসুস্থ পুরুষ হাতিগুলো মুস্টে থাকে না বলে অনেক সময় স্ত্রী হাতিগুলো অন্যদলের পুরুষ হাতির মুস্টের সংকেত অনুসরন করে মিলনের জন্য সেই পুরুষ হাতির কাছাকাছি আসে।

হাতির সামাজিক আচরনের সুন্দর একটি দিক হচ্ছে, নতুন অস্ট্রাস চক্রে আসা স্ত্রী হাতিগুলো দলের বয়স্ক পুরুষ হাতির সাথে মিলনে ভয় কাজ করে। এই ভয় দূর করার জন্য দলের প্রবীন স্ত্রী হাতিরা এগিয়ে আসে। তারা নতুন স্ত্রী হাতিকে আশ্বাস ও সমর্থন প্রদানের জন্য কাছাকাছি অবস্থান করে। যৌন মিলনের সময় পুরুষ হাতি তার শুঁড় স্ত্রী হাতির পিঠের উপর রাখে এবং যৌন মিলনে অংশ নেয়। 

হাতি আকারে সবছেয়ে বড় এবং শক্তিশালী হলেও এদের মিলনের স্থায়ীত্বকাল মাত্র ৪৫ সেকেন্ড। এই সময়ে মধ্যে পুরুষ হাতি স্ত্রী হাতির যৌনিতে শুক্রানু ছাড়ে। 

শুক্রানু ডিম্বানু পর্যন্ত পৌঁছাতে ২ মিটার প্রায় ৬.৬ ফুট দূরত্ব সাতার কাটতে হয় যেখানে মানুষের শুক্রানু ডিম্বানু ‍পর্যন্ত পৌঁছাতে মাত্র ৩ ইঞ্চি দূরত্ব সাতার কাটতে হয়। একটি সফল মিলনের পরে প্রয়োজন হয় ডিম্বানু ও শুক্রানুর মিলন।অস্ট্রাস চক্রের লুটেল দশা ৮-১০ সপ্তাহ হলেও একেবারে উর্ভর সময়কাল মাত্র দুই থেকে তিন দিন। এই সময়ের মিলনে গর্ভধারনের সম্ভাবনা সবছেয়ে বেশী। হাতি ৮০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করতে পারলেও ৪৫-৫০ বছর বয়সের কাছাকাছি এসে উর্ভরতা হ্রাস পায়।

হাতির মধ্যেও সমকামিতা দেখা যায়। সম্প্রতি যৌন পরিপক্কতা অর্জন করা কিংবা বয়স্ক পুরুষ হাতিরা খেলার লড়াইয়ের মাধ্যমে একে অপরকে উদ্দীপ্ত করে যৌন সুখ উপভোগ করে। আবার বন্দি দশায় স্ত্রী হাতিগুলো তাদের শুঁড় দিয়ে একে অপরকে উদ্দীপ্ত করে যা হাতির হস্তমৈথুন নামে পরিচিত।

গর্ভকালীন সময় ও জন্ম

হাতির গর্ভধারন কাল প্রায় দুই বছর যা যেকোন স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সর্বোচ্ছ গর্ভকালীন সময়। হাতির এই দীর্ঘ গর্ভকালীন সময় পাঁচটি কর্পাস লুটিউম দ্বারা রক্ষাণাবেক্ষন হয়। হাতির লম্বা গর্ভকালীন সময়ের মূল কারন হচ্ছে হাতির বাচ্চার বিশাল আকার এবং ধীর বিকাশ। মস্তিষ্ক এবং শূঁড়ের সঠিক বিকাশের জন্য লম্বা সময় ধরে হাতি বাচ্চাকে গর্ভে রাখে। যার ফলে হাতির বাচ্চার মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ ঘটে। ফলে প্রসবের পর বাচ্চারা দ্রুত দাঁড়াতে পারে এবং পরিবারকে অনুসরন করতে পারে। 

হাতির বাচ্চা প্রসব
হাতির বাচ্চা প্রসবের পূর্ব মূহর্ত

সাধারতন বর্ষা বা আদ্র ঋতুতে বাচ্চা প্রসব করে। সদ্যজাত একটি বাচ্চার ওজন হয় ১২০ কেজির মতো এবং হয় ৩৩ ইঞ্চি লম্বা। প্রতিবার প্রজননে একটি মাত্র বাচ্চা হাতির জন্ম হয় তবে কখনো কখনো যমজ বাচ্চারও জন্ম হয় তবে তা একেবারেই বিরল ঘটনা। লম্বা সময় ধরে মাতৃগর্ভে থাকলেও জন্মের পরেই নবজাতক হাতিটি পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারে এবং ভূমিষ্ট হওয়ার পরে তার কাজ কি হবে তাও সে জানে। এই বুদ্ধিমত্তা অর্জন করার জন্যই হাতির বাচ্চারা মায়ের গর্ভে লম্বা সময় ধরে থাকে।

নবজাতক হাতির বাচ্চা
নতুন জন্ম নেওয়া হাতির বাচ্চা

বাচ্চা প্রসবের পর দলের অন্যান্য প্রাপ্ত বয়স্ক ও তরুনরা এসে সদ্যজাত বাচ্চাকে অভিবাদন জানায় তাদের শুঁড় দিয়ে স্পর্শ করার মাধ্যমে। এই সময় হাতির বাচ্চাদের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা সবছেয়ে বেশী থাকে। হাতি শিকারী প্রানীগুলো এই সময় হাতির পালের আশে পাশে অবস্থান করে এবং নবজাতক হাতির বাচ্চাটিকে শিকার করার চেষ্টা করে। নিজের বাচ্চাকে শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মা হাতি এইসময় অতিমাত্রায় সর্তক থাকে। তাই বাচ্চা হাতির আশে পাশে অন্য কোন প্রানীর উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না। 

মা ছাড়াও হাতির বাচ্চাকে অন্য প্রানীদের আক্রমন এবং সেবা যত্ন করার জন্য দলের ০৩ থেকে ১২ বছর বয়সী হাতিগুলো সারাক্ষন বাচ্চা হাতির সাথে অবস্থান করে। এদের আ্যালোমাদার বা আ্যালোপ্যারেন্টিং বলে।

নবজাতক হাতির বিকাশ

জন্মের প্রথম কয়েক দিন হাতির বাচ্চা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য মায়ের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এই সময় বাচ্চা হাতির দৃষ্টিশক্তি দুর্বল থাকে তাই এরা গন্ধ, স্পর্শ এবং শ্ররণশক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। যদিও হাতির বাচ্চা শূঁড়ের সম্পূর্ণ গঠন নিয়ে ভূমিষ্ট হয়েছে তারপরেও জন্মের প্রথম সপ্তাহ বাচ্চা হাতি তার শূঁড়ের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন আনতে পারে না।

নতুন হাতির বাচ্চাকে অভিবাদন
পালের সকল হাতি নতুন জন্ম নেওয়া বাচ্চা হাতিকে স্বাগতম জানাচ্ছে

জন্মের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে বাচ্চা হাতি মোটামুটি ভালোভাবেই হাটতে পারে। এই সময়ে এসে এরা এদের শূড়েঁর উপর আরো বেশী নিয়ন্ত্রন করা শিখে যায়। প্রায় একমাস অতিবাহিত হলে বাচ্চা হাতিগুলো শূড় দ্বারা খাবার তুলে মুখে নিতে পারে। এই সময় এরা শূড়ের সম্পূর্ণ ব্যবহার আয়ত্ব করতে পারলেও শূড় দিয়ে পানি চুঁষে খেতে পারে না। তাই পানি পান করার জন্য এক মাস পর্যন্ত বাচ্চা হাতিগুলো সরাসরি মুখের ব্যবহার করে এবং মায়ের সাহায্যের প্রয়োজন হয়।

একমাস সময়ের মধ্যে শূড়ে দিয়ে খাবার ধরে মুখের মধ্যে আনতে পারলেও এরা জন্মের প্রথম তিন মাস মায়ের দুধ ব্যাতীত অন্য কোন খাবার খায় না। এই সময় দেহের যাবতীয় পুষ্টির যোগান মায়ের দুধ থেকে পায়। তিন মাস সময়ের পরে বাচ্চা হাতিগুলোর ঠোট, পা এবং শূঁড়ের উন্নতি ঘটে। তিন মাস বয়স থেকে বাচ্চা হাতিগুলো অল্প অল্প করে গাছপালা এবং ঘাস খাওয়া শুরু করে।

প্রথম এক বছর বাচ্চা হাতিগুলো মায়ের দুধের উপর বেশী নির্ভরশীল থাকে। এই সময় এরা প্রতি ঘন্টা অন্তর ২-৪ মিনিট করে মায়ের দুধ খায়। 

এক বছর পর বাচ্চা হাতিগুলোর শূঁড়, দাঁত, ঠোট এবং পায়ের সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটে। তখন থেকে এরা খাবারের ব্যাপারে স্বাধীনতা অর্জন করে যদিও বাচ্চা হাতিগুলো তিন থেকে সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খায়।  

বাচ্চা হাতির আচরণ

বাচ্চা হাতিগুলোর মধ্যে লিঙ্গভেদে আচরণের পার্থক্য দেখা যায়। যেখানে পুরুষ হাতিগুলো অন্য হাতির সাথে খেলাচ্ছলে লড়াই করে সেখানে মেয়ে হাতিগুলো একে অপরকে তাড়ানো কিংবা দৌড়ানোর খেলায় মেতে উঠে।


একটি হাতি বন্য পরিবেশে ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। বন্দী অবস্থায় একটি পুরুষ হাতি ৮৬ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার রেকর্ড করেছে।  

হাতির বুদ্ধিমত্তা

১৪-১৫ বছর বয়সে পুরুষ ও স্ত্রী হাতিগুলো পরিনত হয়। তবে উভলিঙ্গের হাতিগুলো পরিনত হতে সময় লাগে ১৮ বছর। হাতিরা বুদ্ধিমান স্তন্যপায়ী প্রানী। স্থলভাগের প্রানীদের মধ্যে হাতির মস্তিষ্ক সবছেয়ে বড় এবং এর গঠন অনেকটা মানুষের মস্তিষ্কের মতো। হাতির মস্তিষ্কে প্রায় ২৫০ বিলিয়ন নিউরন থাকে যা অন্য যেকোন স্তন্যপায়ীর তুলনায় অনেক বেশী। আবার হাতির টেম্পোরাল লোব অঞ্চলে অনেক বেশী ভাজ থাকে যার ফলে হাতি অনেক বেশী তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে পারে তাদের মস্তিষ্কে। এর ফলে হাতি বেঁচে থাকার যাবতীয় উপাদানগুলো তাদের মস্তিষ্কে ধারন করে রাখতে পারে। যেমন শুকনো মৌসুমে কোথায় পানি পাওয়া যেতে পারে কিংবা খাদ্যের সংকট দেখা দিলে কোথায় মাইগ্রেট করতে হবে, কিভাবে এবং কোন পথে যেতে হবে এই তথ্যগুলো কখনো হাতির মস্তিষ্ক থেকে মুছে যায় না। ধারনা করা হয় হাতিরা যে অঞ্চলে বাস করে এরা তার আশে পাশের বিশাল এলাকার একটি কল্পিত মানচিত্র তৈরী করে নিজেদের মস্তিষ্কে জমা করে রাখে।

বুদ্ধিমত্তার বিচারে হাতি ডলপিন এবং শিম্পাঞ্জির সমতুল্য। হাতি নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে পারে এবং তাদের পা ও শূঁড়ের ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোন সমস্যার সমাধান করতে পারে। হাতিরা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের সাথে ভাব, ভালোবাসা, দুঃখ কষ্ট এবং আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে। এদের মধ্যে প্রচুর আবেগ দেখা যায়। তাই পরিবারের কোন সদস্য আহত কিংবা নিহত হলে এরা কষ্ট পায়। এরা শোক প্রকাশ করে এমনকি মৃত সদস্যদের সৎকার পর্যন্ত এরা করে।  

শেষ কথা

বিশ্ব জুড়ে হাতির সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার অনেকগুলো কারনের মধ্যে একটি হচ্ছে হাতির প্রজনন চক্র। হাতি অনেক লম্বা সময় পরে গর্ভধারন করে এবং একবারে একটির বেশী বাচ্চা প্রসব করে না। আবার একটি বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পরে ৪-৫ বছর বিরতি নেয়। যার ফলে একটি প্রাপ্ত বয়স্ক হাতি তার সমগ্র জীবনকালে ৪-৬টির বেশী বাচ্চা জন্ম দিতে পারে না। 

আরো পড়ুন বিড়ালের প্রজনন সম্পর্কিত জানা অজানা সকল তথ্য

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url