বিড়ালের প্রজনন সম্পর্কিত জানা অজানা সকল তথ্য

প্রজনন প্রতিটি প্রানীরই জীবনকালের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রজননের মাধ্যমেই সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি প্রানী তাদের বংশধর টিকিয়ে রেখেছে। স্তন্যপায়ী প্রানীদের ক্ষেত্রে এই প্রজনন ক্রিয়া অনেক জটিল ও কঠিন এবং ক্ষেত্র বিশেষ মৃত্যুর কারনও হতে পারে। তারপরেও কেউ প্রজনন ক্রিয়া বন্ধ করে না। মূলত বংশবৃদ্ধি এবং পৃথিবীর বুকে নিজেদের একটি প্রজন্ম রেখে যাওয়ার জন্য সব প্রানী প্রজনন ক্রিয়ায় অংশ নেয়। 

বিড়াল একটি স্তন্যপায়ী প্রানী। তাই এরা বাচ্চা নিজেদের গর্ভেধারন করে এবং প্রজননের মাধ্যমে নিজেদের বংশধর টিকিয়ে রেখেছে সেই সৃষ্টির শুরু থেকে। আজকের এই পোস্টে আমরা বিড়ালের প্রজনন ও গর্ভধারন সম্পর্কে যাবতীয় সকল জানা অজানা বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো। 

মা বিড়াল বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে
একটি মা বিড়াল বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে (Image Source flickr)


বিড়ালের প্রজনন পরিপক্কতাঃ

প্রজনন করার জন্য সাবার আগেই প্রয়োজন হয় প্রজনন পরিপক্কতার। একটি শিশু কোনদিন প্রজননে অংশ নিতে পারবে না কারন সে প্রজনন করার জন্য পরিপক্কতা অর্জন করেনি। স্তন্যপায়ী প্রানীদের দেহে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যৌন হরমোন উৎপাদন শুরু হয়। যৌন হরমোন উৎপাদন শুরু হলে তখনি প্রজননের জন্য উপযুক্ত বিবেচনা করা যায়। 

বিড়াল কখন বাচ্ছা জন্ম দেওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়?

নতুন করে বিড়াল পোষা শুরু করা সৌখিন বিড়ালপ্রেমীদের একটি কমন প্রশ্ন বিড়াল কতো বছর বয়সে  বাচ্চা জন্ম দেয় কিংবা বিড়াল কতো বছর বয়সে গর্ভবতী হয়? 

এর এক কথায় উত্তর হচ্ছে বিড়াল ছয় মাস বয়সে থেকেই বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। বিড়াল কতো বয়সে বাচ্চা দিবে তা নির্ভর করবে বিড়ালটির জাত কি তার উপর। কারন একেক জাতের বিড়াল একেক বয়সে এসে বাচ্চা জন্মদানের জন্য উপযুক্ত হয়। 

উদাহরন হিসেবে বলা যায় সিয়ামেজি জাতের বিড়ালগুলো মাত্র চার মাস বয়সেই বাচ্চা জন্ম দানের জন্য পরিপক্কতা অর্জন করে। অপরদিকে পার্সিয়ানা জাতের  বিড়ালগুলো বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য উপযুক্ত হতে সময় নেয় দশ মাস।

মজার ব্যাপার হচ্ছে বাচ্চা জন্মদানের জন্য স্ত্রী বিড়ালগুলো পুরষ বিড়ালের তুলনায় দুই এক মাস আগেই পরিপক্ক হয়ে উঠে। আবার যদি এক সাথে বেড়ে উঠা বিড়ালগুলো সব ভার্জিন হয় তবে তাদের  প্রজনন পরিপক্কতা খুব দ্রুত সময়ে হয়ে যায়।

প্রজনন পরিপক্কতা মানেই প্রজনন করা না। একটি বিড়াল যতো দ্রুতই প্রজনন পরিপক্কতা অর্জন করুক না কেনো বাচ্চা জন্মদানের জন্য নূন্যতম এক বছর অপেক্ষা করাই ভালো। এতে মা বিড়াল এবং বাচ্চা বিড়ালগুলোর স্বাস্থগত ঝুকি কম থাকে। একই সাথে নতুন জন্মদান করা বাচ্চাগুলোকে সামলানোর কৌশলও মা বিড়ালটি অর্জন করতে পারবে ভালোভাবে।

বিড়ালের Heat Cycle

প্রজনন পরিপক্কতা অর্জন করার পরেই স্ত্রী বিড়ালুগলোর মাজে estrous cycle শুরু হয়। এই estrous cycle এর ব্যাপ্তি ১৪-২১ দিন। আর এই সময়টাকেই বিড়ালের Heat Cycle বলা হয়। Heat Cycle বিড়ালের একটি স্বাভাবিক ঘটনা যদি না বিড়ালটি স্পেইড (Spayed) না হয়। Heat Cycle প্রজননক্ষম প্রতিটি বিড়ালের মাঝেই দেখা যায়। এসময় বিড়ালের স্বাভাবিক আচরনে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। যা বিড়ালের মালিক ভালো করে লক্ষ করলে বুজতে পারেন। বিড়ালের Heat Cycle এর লক্ষনগুলো জানার আগে জেনে নিই বিড়ালের Heat Cycle ব্যাপারটা কি?

আরো পড়ুন হাতির প্রজনন, গর্ভধারন এবং জীবনচক্রের অজানা সকল তথ্য

বিড়ালের Heat Cycle কি?

প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা বিড়ালগুলোর প্রজনন অঙ্গ হচ্ছে জরায়ু, ডিম্বাশয় এবং ডিম্বানু। জরায়ুতে এই ডিম্বাশয় ও ডিম্বানু একটি চক্রাকার পর্যায়ে আবর্তিত হয়ে মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়ে যায় এবং নতুন করে আবার শুরু হয়। এই চক্রাকার প্রক্রিয়াকে Estrous cycle বা Heat Cycle বলে।

অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রানীরাই একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসে ডিম্বাশয় হতে ডিম্বানু ক্ষরন করে যাকে ডিম্বপাত হয়। এই সময়ে এরা পুরুষ সঙ্গী দ্বারা মিলিত হলেই তখন গর্ভবতি হওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু বিড়ালের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম। বিড়াল Induced Ovulator প্রানী। এরা অন্যান্যদের মতো নির্দিষ্ট সময়ে ডিম্বানু ক্ষরন করে না। বরং পুরুষ সঙ্গীর সাথে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ডিম্বানু ধরে রাখে। যখনি এরা কোন পুরুষ বিড়ালের সাথে মিলিত হয় তখনিই এরা ডিম্বানু অপসারন করে।

বিড়ালের হিট সাইকেল (Heat Cycle) কখন হয়?

অধিকাংশ বিড়ালই প্রায় ছয়মাস বয়সে তাদের প্রথম হিট সাইকেলে এসে যায়। প্রতিটি প্রজননক্ষম সুস্থ স্বাভাবিক স্ত্রী বিড়ালে বছরে চারটি হিট সাইকেল দেখা যায়। তবে এই হিট সাইকেলের শুরু বিড়ালের জাত, পরিবেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে।

বিড়ালের হিট সাইকেল (Heat Cycle) কতোদিন থাকে?

বিড়ালের হিট সাইকেলের ব্যাপ্তি সাধারনত এক সপ্তাহ। তবে পূর্বেই বলেছি বিড়াল Induced Ovulator তাই এরা কোনভাবে হিট সাইকেলে মিলিত হতে না পারলে হিট সাইকেল থেকে বের হয়ে যাবে এবং এক সপ্তাহ পরে আবার নতুন করে হিট সাইকেলে ফিরে আসবে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ সঙ্গীর সাথে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলমান থাকে।

বিড়ালের হিট সাইকেলের (Heat Cycle) লক্ষন কি?

গৃহপালিত বিড়ালগুলো যখনই হিট সাইকেলে আসে তখনি তাদের আচরনে কিছু পরিবর্তন আসে। বিড়ালের এই আচরনগত পরিবর্তন দেখে সহজেই বুজা যায় বিড়ালটি তখন মিলনের জন্য অস্থির হয়ে আছে। সাতটি লক্ষন দেখে সহজেই অনুমান করা যায় বিড়ালটি হিট সাইকেলে আছ।

বিড়ালের হিট সাইকেলের সাত লক্ষন

০১. কোমলতা প্রদর্শন

স্ত্রী বিড়াল যখন হিট সাইকেলে আসে তখন তারা আরো কোমল ও স্নেহময়ী হয়ে উঠে। এই সময় এরা এদের দেহের পিছনের অংশ যেকোন আসবাবপত্র, খেলনা, অন্যান্য বিড়াল এমনকি মালিকের পায়ের সাথে ঘষতে থাকে। এই সময় এরা অনেকটা আদুরে হয়ে যায়। বারবার মেঝেতে গড়াগড়ি খায়।

০২. লেজ ‍তুলে রাখাঃ

কোমলতা প্রায় সব সময়ই বিড়ালের মাঝে দেখা যায় তাই হয়তো এই বৈশিষ্ট দেখে অনেকে বুজতে পারবে না সে হিট সাইকেলে আছে নাকি সহজাত কোমলতা দেখাচ্ছে। তাই হিট সাইকেলের আরেকটা লক্ষন দেখে তা সহজেই অনুমান করা যাবে। কোমলতার সাথে যখন দেখা যাবে বিড়ালটি তার লেজ বার বার তুলে ধরে জননাঙ্গ প্রদর্শন করছে তখন নিশ্চিত হতে হবে স্ত্রী বিড়ালটি হিট সাইকেলে আছে। হিট সাইকেলে থাকা অবস্থায় বিড়াল বারবার তার লেজ তুলে ধরে এবং মাঝে মাঝেই দেহের সম্মুখ অংশ নিচু করে পিছনের অংশ উপর করে রাখে পুরষ বিড়ালকে আকর্ষিত করতে।

০৩. অস্থিরতা প্রদর্শন

এই সময় স্ত্রী বিড়ালগুলো অস্থির হয়ে উঠে মিলনের জন্য। যার ফলে এরা কোথায়ও স্থির থাকতে পারে না। লেজতুলে এইদিক ঐদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। বারবার কঠিন কোন কিছুর সাথে দেহের পিছনের অংশ ঘষতে থাকে।

০৪. যৌনাঙ্গ চাটা

হিট সাইকেল চলাকালে স্ত্রী বিড়ালগুলো তাদের যৌনাঙ্গ জিহ্বা দিয়ে চাটতে থাকে।

০৫. অতিরিক্ত ডাকাডাকি

হিট সাইকেল শুরু হলে স্ত্রী বিড়ালগুলো ক্রমাগত শান্ত ও কোমল কন্ঠস্বরে ডাকতে থাকবে। মূলত পুরুষ সঙ্গীকে আর্কষন ও অবহিত করতেই এমন ডাকাডাকি করে।

০৬. ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা

স্ত্রী বিড়াল হিট সাইকেল চলাকালে একাধিক পুরুষ বিড়ালের সাথে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করে। ঘরে যদি পুরুষ বিড়াল না থাকে তবে তারা ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যায়।

০৭. হলুদ গন্ধযুক্ত প্রসাব করা

হিট সাইকেল চলাকালে স্ত্রী বিড়ালের মূত্রের রং হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। এই সময় এরা মূত্রের মাধ্যমে একধরনের ফেরোমেন নিঃসরন করে যার মাধ্যমে এরা পুরুষ বিড়ালকে তাদের উপস্থিতির কথা জানান দেয়। এইটা মূলত নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার এক ধরনের বিজ্ঞাপন।

বিড়ালের গর্ভকালীন সময়

প্রতিটি স্তন্যপায়ী প্রানীরই একটি নিদির্ষ্ট গর্ভকালীন সময় আছে। বিড়ালও এর ব্যাতিক্রম না।হিট সাইকেলে থাকা অবস্থায় যদি স্ত্রী বিড়াল পুরুষ বিড়ালের সাথে মিলিত হতে পারে তাহলে শুরু হয় তার গর্ভকালীন সময়। বিড়ালের গর্ভকালীন সময় সাধারনত ৬৪-৭১ দিন। গড়ে হিসেব করলে এইটি ০৯ (নয়) সপ্তাহ বা ৬৩ দিন।   

একটি বিড়াল এক সাথে কতোগুলো বাচ্চার জন্ম দিতে পারে?

গর্ভকালীন সময় শেষ হবার পরেই আসে বাচ্চা জন্মাদানের সেই কাংখিত সময়। নতুন বিড়াল মালিকদের প্রশ্ন থাকে একটি বিড়াল একসাথে কতোগুলো বাচ্চার জন্ম দিতে পারে?

এক কথায় গড়ে একটি মা বিড়াল একসাথে ৪-৮টি বাচ্চার জন্ম দিতে পারে। তবে জাত ভেদে এই সংখ্যাটা আরো বাড়তেও পারে। এছাড়াও বাচ্চা জন্ম দেওয়ার হার নির্ভর করে উপর্যুক্ত আবহাওয়া, জলবায়ু এবং মা বিড়ালের বয়স, জাত ও স্বাস্থগত অবস্থার উপর।

বিড়াল Induced Ovulator প্রানী। যার ফলে এরা অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রানীর মতো ডিম্বচক্রের নির্দিষ্ট সময়ে ডিম্বপাত করে না। বরং এরা এদের ইচ্ছে অনুযায়ী ডিম্বপাত করতে পারে। যার ফলে একটি মা বিড়াল একসাথে অনেকগুলো পুরুষ বিড়ালের সাথে যৌন মিলন করতে পারে যদি সে হিট সাইকেল চলাকালীন সময়ে বাসা থেকে বের হয়। এর ফলে একটি মা বিড়াল একসাথে একাধিক পুরুষ বিড়ালের শুক্রানু দ্বারা ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে পারে এবং একাধিক বাচ্চার জন্মদিতে পারে। আবার একই সাথে জন্ম নেওয়া বিড়াল ছানাগুলোর বাবা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

একটি বিড়াল একসাথে কতোগুলো বাচ্চার জন্ম দিতে তা বেশীর ভাগ সময়ে জাতের উপর নির্ভর করে। কিছু কিছু বিড়ালের জাত আছে যারা একসাথে বেশী বাচ্চার জন্ম দিতে পারে আবার কিছু কিছু জাত আছে যারা খুব অল্প সংখ্যক বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে। উদাহরন হিসেবে বলা যায়- সিয়ামেজি (Siamese) বিড়ালগুলো এক সাথে সর্বাধিক পরিমান বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে অপরদিকে পার্সিয়ানা বিড়ালগুলো একেবারেই কম সংখ্যক বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে।

বাচ্চা জন্মদানের জন্য বয়স একটা বড় ফ্যাক্ট। প্রজননকালের প্রাথমিক পর্যায়ে বিড়াল এক বা দুইটি করে বাচ্চার জন্ম দেয়। আবার বয়স যখন ৩-৪ বছর হয় তখন মা বিড়াল সর্বোচ্চ সংখ্যক বাচ্চা একসাথে জন্ম দিতে পারে। বয়স যখন পড়তির দিকে তখন বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সংখ্যাও হ্রাস পায়। সর্বাধিক বাচ্চার জন্ম দেওয়া বিড়াল ডাস্টি (Dusty) নামের বিড়ালটি জীবনের শেষবারে মাত্র একটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। যদিও এর আগে সে ৪২০টি বাচ্চার জন্ম দিয়ে বিড়ালের বিশ্ব রেকর্ডে নাম তুলেছে।

১৯৭০ সালে একটি বিড়াল একসাথে ১৯টি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড। এই ১৯টি বাচ্চার মাঝে চারটি জন্মের সময় মারা গেছে। বাকি ১৫টির মাঝে ১৪টিই ছিলো পুরুষ ছানা।

বাচ্চা জন্মদানের জন্য এই বয়স, জাত ছাড়াও খাদ্যভাস,পুষ্টি, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং রোগবালাই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

সাধারনত দেখা যায় পরিমিত পুষ্টিকর খাবার পাওয়া সুস্থ বিড়াল বেশী সংখ্যক বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে যেখানে খাদ্যের সাথে লড়াই করা বিড়ালগুলো খুব কম সংখ্যক বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে। বন্যবিড়াল, রাস্তার বিড়াল আর গৃহপালিত বিড়ালের মাঝে এইখানে এসে বাচ্চা জন্মদানে ব্যবধান হয়ে যায়। বন্যবিড়াল আর রাস্তার বিড়ালদের খাদ্যের জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় একই সাথে টিকে থাকার জন্য প্রকৃতির সাথেও যুদ্ধ করতে হয়। যার ফলে এরা একসাথে দুই তিনটার বেশী বাচ্চার জন্মদিতে পারে না। সেখানে গৃহপালিত বিড়ালগুলোর খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য কোনরূপ যুদ্ধ করতে হয় না বলেই এরা বেশী পরিমানে বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে।

রোগবালাই যেকোন প্রানীর প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিড়ালরাও এর ব্যাতিক্রম না। সুস্থ বিড়াল যতোগুলো বাচ্চা জন্মদিতে পারবে অসুস্থ বিড়াল ততোগুলো পারবে না।

একটি বিড়াল তার জীবনকালে কতোগুলো বাচ্চার জন্ম দিতে পারে?

সাধারনত একটি বিড়াল বছরে তিন থেকে পাঁচবার বাচ্ছা প্রসব করতে পারে। আবার প্রজননকালীন বয়সের শুরুতে এবং জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে প্রতিবারে খুব কম সংখ্যক বাচ্চার জন্ম দেয়। সেই হিসেবে সামগ্রিক জীবনকালে প্রতিবারে গড়ে চারটি করে বাচ্চা হিসেব করা যায়। একটি মা বিড়াল ১২-১৫ বছর পর্যন্ত বাচ্ছার জন্মদান করতে পারে। বছরে চারবার বাচ্চা ধারন করলে এবং গড়  বয়স ১২ বছর হিসেব করলে একটি মা বিড়াল তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্ছ ৪৮ বার গর্ভবতি হতে পারে এবং গড়ে চারটি করে বাচ্ছার জন্ম দিলে এক জীবনে একটি মা বিড়াল ১৮০-২০০টি পর্যন্ত বাচ্ছার জন্ম দিতে পারে।

এটি একটি গানতিক সমীকরন তবে একটি বিড়াল কতোগুলো বাচ্ছার জন্ম দিবে তা অনেক গুলো বিষয়ের উপর করে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে আছে আবহাওয়া, জলবায়ু, ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান, স্বাস্থ, বয়স, পুরুষ সঙ্গীর উপস্থিতি ইত্যাদি।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ডাস্টি (Dusty) নামে একটি টাবি (tabby) বিড়াল ১৬ বছর বেঁচে ছিলো। ১৬ বছরে Dusty নামের এই tabby বিড়ালটি বাচ্চা প্রসব করেছে ৪২০টি। ৪২০টি বাচ্চা জন্মদিয়ে গিনেস বুকে সবছেয়ে বেশী সংখ্যক বাচ্ছা জন্মদানের রেকর্ড  করেছে।

বিড়াল একসাথে এতাগুলো বাচ্চার জন্ম দেওয়ার কারন

বিড়াল একসাথে এতোগুলো বাচ্চা জন্ম দেওয়ার কারন হচ্ছে বংশধর টিকিয়ে রাখা। বলতে গেলে নিজেদের বংশধরকে এই পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখতেই বিড়াল একসাথে এতোগুলো বাচ্চার জন্ম দেয়। সৃষ্টি লঘ্ন থেকে একটি বিড়াল ছানাকে জন্মের পর হতে নানারূপ প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। এই লড়াইটা দুই ধরনের হয়। একটা আন্তঃপ্রজাতিক/বহিঃপ্রজাতিকের সাথে আরেকটা প্রকৃতির সাথে। আন্তঃপ্রজাতিক লড়াইয়ে বিড়াল তার স্বজাতীয় অন্য বিড়ালদের সাথে খাদ্য আর বাসস্থান ও জীবন সঙ্গীর জন্য লড়াই করতে হয়। বহিঃপ্রজাতিক লড়াইয়ে বিড়ালকে হত্যা করে এমন সব প্রানীর সাথে যুদ্ধ করতে হয়। যেমন কুকুর, শিয়াল ইত্যাদি। প্রাকৃতির সাথে লড়াইয়ে রয়েছে জলবায়ু ও আবহাওয়া, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

আদিমকালে বিড়াল যখন বনে জঙ্গলে থাকতো তখন তারা তাদের বংশধর টিকিয়ে রাখার জন্য একসাথে বেশী পরিমান বাচ্চা জন্মদান করতো। কারন মা বিড়াল জানে তার দশটা শাবকের মাঝে হয়তো দুই চারটি টিকে থাকবে বাকিরা নানা কারনে পূর্ণতা পাওয়ার আগেই মারা যাবে। সেই সময় থেকে গৃহপালিত হওয়ার পরেও বিড়াল তাদের এই স্বভাবটা ধরে রেখেছে।

বিড়ালের বাচ্চার বেঁচে থাকার হার

পূর্বের প্যারায় বলেছি বিড়াল তাদের বংশের নিরাপত্তার জন্য বেশী করে বাচ্চা প্রসব করে। এই ব্যাপারটার সত্যতার প্রমান মিলে আমেরিকান ভেটেরিনারি মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণার পরিসংখ্যানে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় বন্য বিড়াল কিংবা রাস্তার বিড়ালগুলোর বাচ্চার টিকে থাকার হার মাত্র  ২৫%  তার মানে ছয় মাস বয়সের আগেই প্রায় ৭৫%  বিড়াল ছানা মারা যায় বা নিখোঁজ হয়।

যদিও এই সংখ্যাটি গৃহপালিত বিড়ালের ক্ষেত্রে সত্য নয়। কারন গৃহপালিত বিড়ালগুলোকে টিকে থাকার জন্য তেমন যুদ্ধ করতে হয় না। যার ফলে এই ধরনের বিড়ালগুলো ছানার টিকে থাকার হার একটু বেশী। তবে এদের টিকে থাকার হার পরিবর্তনশীল।   

গৃহপালিত বিড়াল ছানাগুলোর টিকে থাকার হার পরিবর্তনশীল হওয়ার কারন কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন বিড়ালের জাত, মায়ের সুস্থতা। মিশ্র জাতের বিড়ালের বাচ্চাগুলো টিকে থাকার হার সবছেয়ে বেশী। আবার খাটি জাতের বিড়ালের বাচ্চাগুলোর টিকে থাকার হার কিছুটা কম। এর কারন মিশ্রজাতের বিড়ালের শরীরে দুইটি ভিন্ন জাতের জীন রয়েছে। আর আমরা জানি যে জীন প্রকট তার বৈশিষ্ট্যই প্রকাশ পায়। মিশ্রজাতের হওয়ায় বাবা মায়ের শরীর থেকে প্রকট জীনগুলো আসে যার ফলে সাধারন রোগগুলো এদের খুব সহজে আক্রমন করতে পারে না আবার জীনগত রোগও এদের তেমন দেখা যায় না। খাটি জাতের বিড়ালে একই লাইনের বাবা মায়ের জীন আসে যার ফলে এদের মাঝে বিভিন্ন জীনগত রোগ দেখা যায়। ফলে খাটি জাতের বিড়ালগুলো সহজেই রোগাক্রান্ত হয় এবং মারা যাওয়ার হার বেশী হয়।

প্রায় ৫% বিড়াল বাচ্চাদের মৃত্যু জন্মের আগেই ঘটে। ভ্রুন অবস্থায় মায়ের শাররীক অসুস্থতা, অপুষ্টি কিংবা জীনগত রোগের কারনে এদের মৃত্যু হয়।

জন্মের প্রথম সপ্তাহে বিড়াল ছানার মৃত্যু হার সবছেয়ে বেশী। এই সময়ে এসে হাইপোথার্মিয়া, পানিশূন্যতা, রক্তে গ্লুকোজের অভাব এবং মায়ের দুধের অভাবে এরা অপুষ্টিতে ভুগে মারা যায়। এছাড়াও জন্মের পরে সঠিক বাসস্থান নির্বাচন করতে না পারার কারনেও অনেক বাচচা মারা যায়। কারন বিড়ার বাচচা জন্মের পরে তাদের প্রচুর উষ্ণতার প্রয়োজন হয়। আর উষ্ণতার কারনেও অনেক বাচ্চা মারা যায়।

তৃতীয় পর্যায়ে ময়ের দুধ ছাড়ানো পরে অনেক বাচ্চা মারা যায়। বিড়াল সাধারনত তিন সপ্তাহ পরেই বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেয়। বাচ্চাগুলো যখন মায়ের দুধ খায় তখন তারা তাদের শরীরের সকল পুষ্টি চাহিদা মায়ের দুধ থেকেই পেয়ে থাকে। মায়ের দুধ হতেই তারা বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে। যখন হঠাৎ করে দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয় তখন এরা বাহিরের থেকে যে পরিমান খাবার পায় তার সাথে তাদের শরীর প্রাথমিক পর্যায়ে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হয়। ফলে এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হাঠাৎ করে হ্রাস পায়। ফলে যেকোন অল্প সংক্রমন রোগেও এরা আক্রান্ত হয়ে মারা। গৃহপালিত বিড়ালগুলোকে যদি টিকা দেওয়া হয় তাহলে এরা হয়তো এই পর্যায়ের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। কিন্তু রাস্তার বিড়ালগুলোর এই সুযোগ নেই।

এই সময় নানা রকম দুর্ঘটনায় অনেক বিড়াল ছানা মারা যায়। কারন সদ্য দুধ ছাড়া বিড়াল ছানাগুলো খাবারের খোজে কিংবা খেলা করার জন্য রাস্তায় বের হয়ে ছুটাছুটি করে। যার ফলে বিভিন্ন শিকারী দ্বারা সহজেই শিকার হয়ে যায় আর না হয় রাস্তার গাড়ির নিছে চাপা পড়ে। 

বিড়াল কখন প্রজনন বন্ধ করে?

স্তন্যপায়ী প্রানীদের প্রজনন ক্রিয়া একসময় বন্ধ হয়ে যায়। কারন প্রজননের জন্য ডিম্বানুর উৎপাদন প্রক্রিয়া একটা বয়সে এসে বন্ধ হয়ে যায়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মেনোপেজ দশা বলে। বিড়ালদেরও কি মেনোপেজ হয়?

এক কথায় উত্তর হচ্ছে না। স্ত্রী বিড়ালের জীবন চক্রে মেনোপেজ দশা নেই। যার কারনে স্ত্রী বিড়াল প্রায় পুরো জীবনকাল জুড়েই প্রজনন করতে পারে। তবে বয়সজনিত কারনে শাররীক দুর্বলতায় জীবনের শেষকালে এসে এদের বাচ্চা জন্মদানের হার হ্রাস পায়। বিভিন্ন বয়স জনিত রোগ যেমন আর্থ্রাইটিস এর কারনে এদের বাচ্চা জন্মদান কঠিন হয়ে উঠে। এছাড়াও প্রজনন পরিপক্কতা অর্জন করার পর থেকে বাচ্চা জন্ম দিতে দিতে একসময় জরায়ু ক্লান্ত হয়ে উঠে যার ফলে একসময় বেশী পরিমান বাচ্চা দেওয়ার প্রবনতা হ্রাস পায়। তবে সুস্থ ও স্বাভাবিক স্ত্রী বিড়াল শেষ বয়স পর্যন্ত বাচ্চা জন্ম দিতে পারে।  

পুরুষ বিড়ালের ক্ষেত্রেও প্রায় একই কথা প্রযোজ্য। অর্থাৎ এরা এদের জীবনের শেষ বয়স পর্যন্ত প্রজনন ক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে পারে। যদিও বয়স জনিত কারনে শেষ বয়সে এসে শুক্রানুর উর্বরতা কিছুটা হ্রাস পায়। যার ফলে গর্ভধারনের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। আবার আর্থারাইটিসের মতো শাররীক অসুস্থতা শুক্রানু উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে।

নিরপেক্ষ বা বন্ধ্যা বিড়াল (Spay & Neuter)

Spay বিড়াল বলতে বুজায় সার্জারির মাধ্যমে যেসব স্ত্রী বিড়ালের ovaries and uterus অপসারন করা হয়। যার ফলে এরা গর্ভধারন করতে পারে না। এই ধরনের নিরপেক্ষ বা বন্ধ্যা স্ত্রী বিড়ালগুলোকে Spayed বিড়াল বলে।

আর Neuter বলতে বুজায় সেইসব পুরুষ বিড়ালদের যাদের Testis বা অন্ডকোষ সার্জারির মাধ্যমে অপসারন করা হয় যার ফলে শুক্রানু উৎপাদন হতে পারে না। 

বিড়ালকে স্পে বা নিউটার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিড়ালের অতিরিক্ত বাচ্চা জন্মদানের বৈশিষ্টের কারনে। মূলত বিড়ালের বাচ্চা জন্মদান বন্ধ করতেই এমনটা করা হয়। যদিও ব্যাপারটা কিছুটা অমানবিক কিন্তু একটি স্ত্রী বিড়াল বছরে চারবার বাচ্চর জন্ম দিলে বছর শেষে তার বাচ্চার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫-১০টি। একজন শৌখিন বিড়ালের মালিক কোনদিন এতোগুলো বাচ্চার দায়িত্ব নিতে চায় না। যার জন্য অনেক সময় বিড়াল ছানাগুলোকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং এরা রাস্তায় দুর্ঘটনায় মারা যায় কিংবা বেওয়ারিশ বিড়াল হিসেবেই টিকে থাকে।

তবে অনেকেই মনে করেন প্রতিটা বিড়াল দম্পতিরই বাচ্চা জন্মদানের অধিকার রয়েছে। তাই অন্তত একবার বাচ্চা জন্মদানের সুযোগ দেওয়া উচিত।


বিড়ালকে নিরপেক্ষ বা বন্ধ্যাকরন (Spay & Neuter) করার উপকারিতা

শৌখিন বিড়াল মালিকদের জন্য স্পে অথবা নিউটার সবসময়ই পছন্দের। এর অনেকগুলো কারন আছে যা নিছে বর্ণনা করা হলো।

০১. স্ত্রী বিড়ালদের অধিকাংশই জরায়ু ক্যান্সারে মারা যায়। অথচ স্পে এর ফলে স্ত্রী বিড়ালগুলোর জরায়ু ক্যান্সার প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রায় পায়। আবার পুরুষ বিড়ালের ক্ষেত্রে নিউটার এর ফলে টেস্টিকুলার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার হ্রাস পায়। এতে করে পোষা বিড়ালগুলোর আয়ুষ্কাল বেড়ে যায়।

০২. প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী বিড়ালগুলো প্রতি তৃতীয় সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচদিন মিলনের জন্য অস্থির হয়ে থাকে। এইসময় এরা বাসা বাড়ির বিভিন্ন যায়গায় ফেরোমেন মিশ্রিত হলুদ বর্ণের প্রসাব করে পুরুষ বিড়ালকে জানান দেওয়ার জন্য। এই প্রসাব অনেক দুর্ঘন্ধযুক্ত। যা বাসা বাড়িকে দূষিত করে। স্পে করা হলে স্ত্রী বিড়ালগুলো মিলনের জন্য কোনরূপ অস্থির হয় না।

০৩. বাসায় যদি স্ত্রী বিড়াল থাকলেও অনেক সময় পুরুষ বিড়ালগুলো মিলনের জন্য আরো স্ত্রী বিড়াল খুজে বেড়ায়। প্রজনন সময়ে তাই পুরষ বিড়ালকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। আবার বাসা থেকে বের হলে অন্য পুরুষ বিড়ালের সাথে লড়াই কর আহত হয় কিংবা রাস্তায় দুর্ঘটানায় মারাও যেতে পারে। আবার বের হয়ে অন্য বিড়ালের সাথে মিলিত হওয়ায় সংক্রমক রোগেও আক্রন্ত হতে হয়। অথচ নিউটার করলে পুরুষ বিড়ালের যৌন উদ্দীপনা বাড়ে না যার ফলে তাদের আয়ু বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থ থাকে।

০৪. প্রজনন সময়ে পুরুষ বিড়ালগুলো অনেক বেশী এগ্রেসিভ হয়ে থাকে। এই সময় এরা তাদের নিজস্ব সীমারেখায় অন্যকোন পুরষ বিড়ালকে সহ্য করতে পারে না। ভুল ক্রমে অন্য কোন পুরষ বিড়াল তার টেরিটোরি এলাকায় প্রবেশ করলে তারা রক্তক্ষয়ী মারামারি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এছাড়াও নিজস্ব এলাকা নিহ্নিত করতে এরা প্রসাবের সাথে এক ধরনের ফেরোমোন নিঃসরণ করে যা বাসা বাড়িকে দুর্ঘন্ধযুক্ত করে ফেলে। নিউটার করা হলে পুরুষ বিড়ালগুলো সব সময়ই শান্ত থাকে।

০৫. বারবার বাচ্চা জন্মদানের ফলে স্ত্রী বিড়ালের স্বাস্থের ঝুকি বেড়ে যায়। যার ফলে এরা অল্প বয়সেই রুগ্ন হয়ে মারা যায়। স্পে এর ফলে তাদের শরীরের গঠন ঠিক থাকে এবং স্বাস্থ ঝুঁকিও কম থাকে।

০৬. স্পে এবং নিউটার এর সবছেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি অনেক খরচ কমিয়ে দেয়। একটি বিড়াল বার বার বাচ্চা প্রসব করলে তাদের যত্ন এবং খাবারের জন্য অতিরিক্ত খরচ করতে হয়। স্পে এর ফলে এই খরচটা হ্রাস পায়।

স্পে (Spay) অথবা নিরপেক্ষ (Neuter) সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনাঃ

অনেকেই মনে করেন যে বিড়ালকে স্পে (Spay) অথবা নিরপেক্ষ (Neuter) করা হলে এদের ওজন বেড়ে যায় এবং এরা অলস হয়ে পড়ে। ব্যাপারটা আসলেই মোটেও তা নয় বরং স্পে (Spay) অথবা নিরপেক্ষ (Neuter) এর ফলে বিড়ালের শাররীক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যেসব বিড়াল খুব কম দৌড়ায় বা ব্যায়াম করে কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করে তারা স্পে (Spay) অথবা নিরপেক্ষ (Neuter) হোক বা না হোক এরা মোটা হবেই। তাই বিড়ালকে প্রতিদিনই কিছু না কিছু ব্যায়ম করানো উচিত।

আবার অনেকেই মনে করেন যে বিড়ালের সব অস্বাভাবিক আচরন স্পে (Spay) অথবা নিরপেক্ষ (Neuter) করালেই সেরে যাবে কিংবা এর কারনেই হয়ে থাকে। ব্যাপারটা আসলেই ভুল। বিড়াল অনেক সমাজিক একটি প্রানী। এটিকে আপনি যেভাবে প্রশিক্ষন দিবেন সেইরূপ আচরনই সে করবে। বিড়ালের যৌন আচরন ব্যাতীত অন্য কোন আচরন স্পে (Spay) অথবা নিরপেক্ষ (Neuter) নিয়ন্ত্রন করে না।

 স্পে (Spay) অথবা নিরপেক্ষ (Neuter) কখন করাবেন

আমাদের উপমহাদেশে প্রাপ্ত বেশীর ভাগ বিড়ালেই চার মাস বয়সে এসে প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। তাই বিড়াল ছানার বয়স যখন আট সপ্তাহ হবে এবং ওজন নূন্যতম ০২ পাউন্ড হবে তখনি স্পে (Spay) অথবা নিরপেক্ষ (Neuter)  বা বন্ধ্যাকরণ করা উচিত। এই সময়ে বন্ধ্যাকরণ করা হলে বিড়াল ছানাগুলো খুব কম সময়ের মাঝেই সুস্থ হয়ে উঠে।

বন্ধ্যাকরণ কখনো নিজে থেকে করতে যাবেন না। কোন পশু চিকিৎসক এর মাধ্যমে করাবেন। এতে অনাকাংখিত ঝুঁকি এড়ানো যাবে।

বিড়ালের প্রজনন সর্ম্পকিত কিছু সাধারন প্রশ্নঃ

০১. বিড়াল এক বছরে কতোবার গর্ভবতী হতে পারে?

বিড়ালের গর্ভকালী সময় দুই মাস। সেই হিসেবে একটি মা বিড়াল বছরে পাঁচবার গর্ভবতী হতে পারে। তবে গড়ে হিসেব করলে একটি স্ত্রী বিড়াল বছরে তিনবার গর্ভবতী হয় বা বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে। 

০২. বিড়াল কতোদিন বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ায়?

মা বিড়াল সাধারনত চার সপ্তাহ বা এক মাস বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ায়। তবে অনেক সময় তা ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। এই সময় মা বিড়াল বাচ্চাকে সব ধরনের যত্ন করে থাকে এবং চার থেকে ছয় সপ্তাহ পরে যখন বাচ্চা বিড়ালগুলো বেঁচে থাকার মতো সকল ধরনের সামার্থ অর্জন করে তখন মা বিড়াল তাদের ছেড়ে দেয়।

০৩. বিড়ালের বাচ্চার চোখ কতো দিন পরে ফোটে?

বিড়ালের বাচ্চা অন্ধ হয়ে জন্মায়। জন্মের পর পরেই  এরা চোখের পাতা খুলতে পারে না। জন্মের সাত থেকে দশ দিনের মাথায় বাচ্চা বিড়ালগুলো প্রথম চোখ ফোটে। জন্মের দুই সপ্তাহ পরে বিড়ালের বাচ্ছাগুলো পরিপূর্ণ ভাবে দেখতে পারে। এই সময় এদের চোখের বর্ণ নীল রঙ্গের হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা ঠিক হয়ে যায়।

উপসংহারঃ

একটি সুস্থ স্বাভাবিক স্ত্রী বিড়াল বছরে প্রায় ৫-১২টি বাচ্চার জন্ম দিতে পারে। এই বাচ্চাগুলোর অধিকার রয়েছে স্বাভাবিক জীবন যাপনের। আপনার পোষা বিড়ালটি হতে যদি আপনি এতাগুলো বাচ্চা আশা না করেন তাহলে তাকে বন্ধ্যাকরণ করে রাখতে পারেন। এতে অন্তত বেওয়ারিশ বিড়ালের সংখ্যা হ্রাস পাবে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url